বুধবার, ৫ মে, ২০২১

পানির নীচে একজন চ্যাম্পিয়নের অন্যরকমের যুদ্ধ "

 "পানির নীচে একজন চ্যাম্পিয়নের অন্যরকমের  যুদ্ধ  "



সাভারস কারাপেথিয়ান একজন আর্মেনিয়ান অলিম্পিক সাতারু চ্যাম্পিয়ান। ১৯৭৬ সালে ভাইয়ের সাথে বিশ কিলোমিটার দৌড় সবে মাত্র শেষ করেছেন। এমন সময় দেখেন  লম্বা একটা ট্রলি বাস   নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে  গভীর জলাধারে পতিত হয়েছে। 


সাভারস সাথে সাথে পানিতে ঝাপ দিয়ে প্রায় আশি ফুট নীচে  তলিয়ে যাওয়া বাসটির কাছে যান এবং  গভীর পানির নীচে জিরো ভিজিবিলিটি থাকা সত্ত্বেও ক্রমাগত পায়ের আঘাতে বাসের পেছনের জানালা ভাঙতে সক্ষম হন। সেই ভাঙ্গা জানালা দিয়ে একজনকে বের করে নিয়ে এসে তীরে পৌঁছান। আবার সাঁতরে গিয়ে আরেকজনকে বের করে নিয়ে আসেন। এভাবে  টানা সাড়ে পাঁচ ঘন্টা প্রচেষ্টায় প্রায় বিশ  জন মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হন।


অতিরিক্ত ঠান্ডায় আর একটানা পানির নীচে থাকার কারণে   নিউমোনিয়া, ফুসফুসের প্রদাহ, লাণ্জ ডেমেজ সহ শরীরে নানা জটিলতা তৈরি হয়। হাসপাতালে কাটাতে হয় একটানা ৪৫ দিন। সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরলেও তার অলিম্পিক জীবনের ইতি ঘটে। সাভারসের এতে কোনো আফসোস নেই। তিনি বলেন-  অলিম্পিক গোল্ডের চেয়ে বিশজন মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি।


একজন সাতারু অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করলো কি করলো না এটা কোনো বড় খবর না। কত সাতারু, কত ক্রিড়াবিদরাতো শুধু খেলার মাঠ থেকে না জীবন থেকেই হারিয়ে যায়। কে কার খবর রাখে। ফলে, সাভারসও ইতিহাস থেকে একেবারে নীরবেই হারিয়ে যান।  এরপর কেটে গেছে প্রায় ছয় বছর ।


সাভারস যে বিশজন মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিলেন তাদেরই একজন রাশিয়ার বিখ্যাত প্রাভদা পত্রিকায় কাজে যোগ দিয়ে তার জীবন ফিরে পাওয়ার ঘটনাটি পত্রিকা অফিসে গল্পচ্ছলে শেয়ার করলে- পত্রিকার সম্পাদক এটা নিয়ে একটা ফিচার তৈরি করতে বলেন। ১৯৮২ সালের অক্টোবর মাসের ১২ তারিখ সেই ফিচারটি প্রকাশিত হয়। যার শিরোণাম ছিলো- The Underwater Battle of the Champion"   


সাভারসের নাম এবার রাশিয়া থেকে আর্মেনিয়ার ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। ছোট, বড়, যুবক, বৃদ্ধ নানা জনের কাছ থেকে প্রায় ৬০ হাজার চিঠি তাঁর কাছে আসে। 

সাভারস বলেন একেকটা চিঠি যেন অলিম্পিকের একেকটা গোল্ড মেডেলের চেয়েও মূল্যবান।  কিন্তু আমি গোল্ড মেডেলও চাইনি, মানুষের এমন ভালোবাসা পাবো তাও ভাবিনি। আমার সামনে কি ঘটবে বা না ঘটবে তাও চিন্তা করিনি।  শুধু চেয়েছি যেভাবেই হোক ডুবে যাওয়া মানুষগুলোর জীবন যেন বাঁচে। 


১৯৮৬ সালে তার বাড়ির পাশেই এক বিল্ডিং এ আগুনে ধরে। এবারও সেই রেসকিউয়ার সাভারস।  কেউ দমকল বাহিনীর অপেক্ষা করছে। কেউ ভিড় করে দূর থেকে দেখছে। অসুস্থ সাভারস দ্রুত আগুনে পোড়া বিল্ডিং এ প্রবেশ করেন এবং শরীরে সমস্ত শক্তি নিঃশেষ করে মাটিতে মুর্ছা না যাওয়া পর্যন্ত  ওয়ান ম্যান আর্মি হিসাবে তার উদ্ধার কাজ চালাতে থাকেন। আগুনে পোড়া শরীর নিয়ে তাকে আবারো হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। 


তাঁর  জীবন কাহিনী নিয়ে ২০১২  সালে তাঁর  তৈরি হয় ম্যুভি "সুইমার" । এক সত্যিকারের হিরো সাভারস কারাপেথিয়ান ৬৭ বছরে বয়সেও এখনো মানবতার সেবায় নিয়োজিত আছেন এবং গত সপ্তাহে জীবনে অর্জিত সমস্ত সম্পদ মানবতার সেবায় দান করে দিয়েছেন। 


ভাবছি যেখানে কোনো কোনো মানুষ  স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বুঝেনা। জীবনে যা পায় তা কব্জা করে নিতে চায়। সেখানে সাভারস কারাপেথিয়ানদের মতো মহান মানুষেরা আছে যারা জীবন এবং ধন দুটোই মানুষের জন্য বিলিয়ে দিয়ে যায় ।


এই মহান মানুষটি সম্পর্কে আমি আজই জানলাম আর ভাবলাম- এমন একজন মহৎ মানুষ সম্পর্কে জানা দরকার। তাই শেয়ার করলাম।


মানবতাবাদী হিরো সাভারস কারাপেথিয়ান আপনার জন্য হৃদয়ের গভীর থেকে শ্রদ্ধা।


- Arif Mahmud

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পৃথিবীর দিকে ফিরে আসছে চায়না রকেট

 চীনা মহাকাশ প্রকল্প ‘তিয়ানহে স্পেস স্টেশন’ এর জন্য পাঠানো একটি রকেটের ১০০ ফুট লম্বা মূল অভ্যন্তরীণ অংশের (কোর) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেছে। অনিয়ন্ত্রিত গতিতে সেটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিলোমিটার উঁচুতে বায়ুমন্ডলে ছুটে চলেছে রকেটটির খন্ডাংশ।


কোথায় পড়তে পারে রকেটটি?


ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৮০ কিমি. উচ্চতায় রকেটটি ছুটে বেড়ালেও এর গতিপথ এলোমেলো নয়। তাই পৃথিবীর যে কোন স্থানেই পড়তে পারে এ তথ্য সঠিক নয়। বর্তমান গতিপথ অনুযায়ী, রকেটটির ছাই হয়ে যাওয়া অবশিষ্টাংশ সমুদ্র এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। সেই সঙ্গে ন্যু-য়র্ক, মাদ্রিদ, বেইজিং, চিলি, ওয়েলিংটন, নিউজিল্যান্ডে ধ্বসে পড়ার কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে।


কতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে?


চীনের বানানো এই বৃহত্তম রকেটটির নাম- লং মার্চ ৫বি রকেট। বায়ুমন্ডলে ছুটতে ছুটতে এর অধিকাংশ অংশই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। রকেটের কিছু টুকরো হয়তো পৃথিবীতে এসে পড়বে। তাতে এটি ১০০ মাইল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া একটি ছোট বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে।


১৯৯০ সাল থেকে পৃথিবীতে যতগুলো রকেটের অনিয়ন্ত্রিত রি-এন্ট্রি ছিল তার সবই ১০ টনের কম। তবে লং মার্চ ৫বি রকেট এর অংশটির ওজন প্রায় ২১ টন বলে মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধাজনক নয় বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


চীন এর আগেরবার যখন লং মার্চ ৫বি রকেট উৎক্ষেপণ করেছিল তখনও কিছু বড় লম্বা ধাতব অংশ পড়ে আইভরি কোস্টে বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যদিও বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষে এর বেশিরভাগ অংশই জ্বলে গিয়েছিল। তবুও প্রচুর ধাতব টুকরো পৃথিবীতে এসে পড়েছিল। কিন্তু তখন কেউ হতাহত হয়নি। সম্প্রতি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে।


#China #Roket


শনিবার, ১ মে, ২০২১

দোয়ার শক্তি;মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রাপ্ত একজন কয়েদি আর তাঁর প্রার্থনাঃ

মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রাপ্ত একজন কয়েদি আর তাঁর প্রার্থনাঃ 


খাবার দিতে গিয়ে দেখি উনি সেলের এক কোনে জায়নামাজে বসে আছেন। পায়ের শব্দে চোখ উপরে তোলেন। অশ্রুসজল চোখ। শান্ত স্বভাব। ধীর স্থির। 

মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত আসামীদের এই সেলে নিয়ে আসা হয়। 


আর আমার মতো যাদের হৃদয়  পাথরের মতো শক্ত- তাদেরকেই এই সেলে পাহারায় নিযুক্ত করা হয়। উনার বিরুদ্ধে মামলা খুবই শক্ত।


খুনের আসামী। নিম্ন আদালতে মৃত্যদণ্ডের আদেশ হয়েছে। এখন উচ্চ আদালতে রায় বহাল থাকলেই উনার ফাঁসি কার্যকর হবে।  


আসামীর প্রতি আমার আচরণ যত কঠোর। উনার আচরণ ঠিক ততোই কোমল। আমার সুদীর্ঘ ত্রিশ  বছরের কারারক্ষী জীবনে অনেক খুনিকে দেখেছি। খুনির চোখ দেখে চেনা যায়। কিন্তু উনার চোখ দুটো বড়ই নিষ্পাপ।


উনি আমাকে সালাম দেন। অশ্রুসজল চোখেও একটু স্মিথ হাসেন। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়- এমন নরম স্বভাবের একজন মানুষ  এরকম ভয়ঙ্কর খুনি হতে পারে।


আমি সরাসরি জিজ্ঞাসা করি -খুনটা আপনি কেন করলেন?


তিনি  কোরআন শরীফ থেকে সুরা মায়েদার একটা আয়াত আরবিতে পাঠ করে বলেন-


নিরাপরাধ কোনো ব্যক্তিকে কেউ  হত্যা করলো-মানে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল; আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলো মানে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীর প্রাণ রক্ষা করল।


এরপর তিনি  বলেন- তিরমিজিতে একটা হাদিস আছে- ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ তাই মানুষ খুনের মতো এমন নৃশংস, জঘন্য অপরাধ আমি কেমন করে করতে পারি। উনার কন্ঠ ভারাক্রান্ত হয়।


জীবনের বায়ান্ন বছর বয়সে এই প্রথম বুঝতে পারি- আমার মতো পাথর হৃদয়ের মানুষের মনও নরম হয়। 

আচ্ছা- তাহলে এই খুনের মামলায় প্রধান আসামি হিসাবে আপনি জড়িয়ে পড়লেন কেমন করে?  


ঘটনা সত্য - একজন প্রভাবশালী মানুষ খুন হয়েছে এবং কাকতালীয়ভাবে এই খুনের ঘটনা থেকে আমি মাত্র কয়েক কদম দূরে ছিলাম। যারা খুন করেছে- তারা আরো প্রভাবশালী।


আর আমার মতো এক দূর্বল মানুষকে ফাঁসিয়ে দিয়ে ওরা বেঁচে গেছে আর নিয়তি আমাকে এই নির্জন সেলে নিয়ে এসেছে।


আপনার আত্মীয় স্বজনরা কোনো চেষ্টা করেনি।উকিলরা আপনার পক্ষে দাঁড়ায়নি।ওরা যে যেভাবে পারে চেষ্টা করছে। আমাকে বাঁচাতে একটুকরো ভিটে ছিলো- সেটা বিক্রি হয়েছে।


বউ ছোট দুই সন্তান নিয়ে গৃহহীন হয়েছে। বৃদ্ধা মা আগে থেকেও কম দেখতেন। আমার জন্য কাঁদতে কাঁদতে বৃদ্ধ মায়ের চোখ দুটো এখন আর আলো দেখে না। 


কিন্তু বিচার, কোর্ট, আদালত, সমাজ, সংবাদ  এসবতো আমার মতো দূর্বলের পক্ষে না। তাই, আমার যত দ্রুত ফাঁসি হবে- ওরা সবাই তত দ্রুত বেঁচে যাবে। কিন্তু আমি জানি আমি নির্দোষ। তাই উচ্চ আদালতে আমি পিটিশন দায়ের করেছি।


আমার উচ্চ আদালত হলো- আমার আল্লাহ। উনি সবচেয়ে উত্তম পরিকল্পনাকারী। আমার নিয়তিতে যদি ফাঁসি লেখা থাকে সেটা হবে।


আর যদি আমার মুক্তি লেখা থাকে তবে সেটাও হবে। আমার জীবন মৃত্যুর মালিক একমাত্র আল্লাহ। সবকিছুই আমি আমার রবের উপর ছেড়ে দিয়েছি। 


পরদিন উনার স্ত্রী দুই পুত্র সহ উনার মাকে নিয়ে দেখা করতে আসেন। সবাই অনবরত কাঁদছে। বৃদ্ধা মায়ের হাত দুটো ছেলের মুখের উপর হাতড়ে বেড়াচ্ছে।


মা ছেলের মুখে, ঠোঁটে, গালে, মাথায় চুমু খাচ্ছেন। পিতা চুমু দিচ্ছে তার নিষ্পাপ দুটো সন্তানের মুখে। সুদীর্ঘ সময়ের কারারক্ষী জীবনে এই প্রথম আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ে। বুকের ভিতরটা মোচড়ে ওঠে।


তিনি মাকে বলেন- মা পিটিশনতো দিয়ে রেখেছি। উচ্চ আদালতে। আল্লাহর আরশে। এই যে আমার মুখের সাথে তোমার লেগে থাকা হাত দুটো যত কাছে।


উনি তার চেয়েও কাছে মা। উনি খুব কাছে। উনি সব দেখছেন মা। কোনো কিছুই তার পরিকল্পনার বাইরে না। আমি আমার দুটো অবুঝ সন্তানের মতো নির্দোষ আর নিষ্পাপ মা। 


আল্লাহর উপর বিশ্বাস আমি অনেক পড়েছি, অনেক গল্প শুনেছি। কিন্তু এমন দৃঢ় বিশ্বাস জীবনে এই প্রথম দেখলাম। কয়েকদিন কেটে গেলো।


যখনই খাবার দিতে যাই। দেখি উনি জায়নামাজে আছেন। অথবা সিজদায় পড়ে রয়েছেন। হাইকোর্টে চূড়ান্ত রায় নিষ্পত্তির আগে এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে।


যে লোক এই নিরাপরাধ মানুষটিকে খুনের মামলায় জড়িয়েছিলো- তার গাড়ী এক মারাত্মক দূর্ঘটনায় পড়ে। ঘটনাস্থলেই স্ত্রী, পুত্র মারা যায়। অজ্ঞান অবস্থায় দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।


কয়েক ঘন্টা পর তার জ্ঞান ফিরে আসলে সে জানতে পারে- দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী-পুত্র মারা গেছে। এটা শুনার পর তার অবস্থায় আরো অবনতি ঘটে। সে বুঝতে পারে- জীবনের সব কিছু দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।


ধন, দৌলত, ঘর বাড়ি, ক্ষমতা কোনো কিছুই তার আর কাজে লাগবেনা। যে কোনো সময় সে মারা যাবে। তাই, নিজে খুন করে আরেকজনকে খুনের মামলায় ফাঁসিয়ে সে আল্লাহর কাছে এতো বড় পাপ নিয়ে যাবে কেমন করে।


সেখানেতো আর কোনো কোর্ট, হাইকোর্ট নেই। হয়তো বা জীবনে সে এমন কোনো কল্যাণ করেছে যার জন্য  আল্লাহ তাকে একটা শেষ সুযোগ করে দিয়েছেন।


মৃত্যু শয্যায় শুয়ে সে চীৎকার করে বলতে থাকে - সব মিথ্যা, সব মিথ্যা। সত্য হলো- আব্দুল বাতিন নির্দোষ। আর আমিই সেই খুনি। 


কোর্টে আব্দুল বাতিনকে বেখুসুর খালাস দেয়া হয়। কোর্টে দাঁড়িয়ে বুঝলাম- যারা নির্দোষ আর যারা গভীরভাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করে- আল্লাহ তাদের এভাবেই রক্ষা করেন।


উনাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আমি বলি, কারারক্ষি হিসাবে আমার চাকরিরও  শেষ দিন গনিয়ে আসছে।  আমাকে আপনি এমন কিছু বলুন যা আমি সারাজীবন মনে রাখতে পারি। উনার কথাগুলো হুবুহু নীচে তোলে ধরলামঃ


আল্লাহর চেয়ে আপনজন আর কেউ নেই। জীবনের কঠোর সংকটময় দুঃসময়ে শুধু না যে কোনো সময় তার কাছে চান এবং হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করুন -তিনি আপনার ডাক শুনছেন।


আল্লাহ শুধু একটা নাম বা ইমাজিনারি সত্তা না।  তিনি এক জীবন্ত বাস্তবতা। ঘাড়ের শিরার চেয়ে তিনি মানুষের সন্নিকটে।


আর, আল্লাহ এমন ভাবে মানুষকে সাহায্য করেন পৃথিবীর কোনো উইসডম দিয়ে তার ব্যাখ্যা করা সম্ভব না।  


আব্দুল বাতিন দু হাতে তার দু সন্তানকে ধরে হাঁটেন। পিছনে স্ত্রী আর মা। আমি বিস্ময়ভরা চোখে যেন আল্লাহর এক অলৌকিক নিদর্শন দেখি।


খার্তুম কোর্টে (সুদান) সেদিন আমি শুধু  আব্দুল বাতিনের ঈমান দেখিনি। আমি শুধু  তাঁর দোয়ার শক্তি দেখিনি। 


একজন নিরাপরাধ মানুষের অলৌকিক মুক্তি দেখিনি।   এই দিন আমি নতুন করে মুসলমান হয়েছি। এই দিন  আমি আমার আল্লাহকে খুঁজে পেয়েছি। 




আলোচিত সমালোচিত রেবেকা শাফীঃ

 রেবেকা শাফী!

অনেকে ফেসবুকে নিম্মের ছবিটির মেয়ের বিতর্ক দেখে থাকবেন।চলুন তার অর্জন গুলো একটু দেখে  আসি-


✔ Physics Undergrad (GPA 4.00) - Cal Tech

✔ Master’s Astrophysics - Harvard

✔ PhD – Harvard (On Black hole Spin!)

✔ Teaching Assistant, Post Doc RA, Swartz Fellow in Comp Neuroscience – Harvard Center of Brain Science

✔ Post Doc Fellow – Broad Inst at MIT and Harvard

✔ Post Doc Fellow – Harvard Med School

✔ Winner of US$ 200,000 grant to study “Measure of Black hole Spin”

✔ Best TV Debater – Bangladesh Television (I just saw her debate in a video, one of the best!) 


ইনি আগে Physics নিয়ে পড়তেন, এখন তার interest হচ্ছে Biology! কাজ করছেন neuroscience আর genetics এর intersection নিয়ে Harvard Medical School এ!

আর আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে একটু দেখে আসি চলেন-

আমাদের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে উন্নতি লাভ করা মানে ইয়ো ইয়ো টাইপের হওয়া-

আমাদের বর্তমান প্রজন্মের একটা ধারণা হলো আপনি তখনি সমাজে টিক থাকতে পারবেন যখন আপনি আপনার বাকি ফ্রেন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন।

এদের কাছে জীবন মানে ফেসবুকে দিনে ডজন খানিক সেফলি দেওয়া-

এদের কাছে জীবব  মানে তথাকথিত ভাইয়াকে আইডল মানা-

এদের কাছে জীবন মানে ইশ যদি সালমান মুক্তাদিকের সাথে একটা সেলফি তুলতে পারতাম-

এদের কাছে জীবন মানে ব্যান্ডের গানে নাচ করা-

এদের কাছে জীবন মানে বই কিনে সেটার পাশে একটা কফির কাপ রেখে ছবি তুলা-

এদের কাছে জীবন মানে ইউটিউব এ সাবস্ক্রাইবার আর্ন করা-

পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই একজন পাকিস্তানি শিক্ষা আন্দোলনকর্মী, যিনি সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।

.

এই মালালা  যে মেয়েদের পক্ষে কথা বলায়,মেয়েদের শিক্ষার পক্ষে কথা বলায় ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ৯ অক্টোবর, স্কুলের বাসে একজন বন্দুকধারী তাকে চিহ্নিত করে তিনটি গুলি করে, যার মধ্যে একটি তার কপালের বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে চামড়ার তলা দিয়ে তার মুখমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে কাঁধে প্রবেশ করে।

.

একজন অদম্য সাহসী নারী এই মালালা ইউসুফজাই।

তার এই সাহস তার এই কর্ম তাকে এনে দিয়েছে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। তাছাড়া তিনি তার আরো কিছু অর্জন-

শাখারভ পুরস্কার

সাইমন দে বোভেয়ার পুরস্কার

সাম্মানিক কানাডীয় নাগরিকত্ব

জাতীয় যুব শান্তি পুরস্কার

.

আর আমাদের মেয়েরা কি করছে? ফেসবুক,ইউটিউব, টুইটার।একটু ঘুরলাম,খেলাম এইতো জীবন।

আফসোস, জীবনটাকে তারা এখনো বুঝতে শিখেনি।

জীবনের আসল অধ্যায়টা তারা কখনো দেখেনি।

জীবনে বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীতে কত কত মেয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে তা তারা জানেনা।

তারা শুধু জানে প্রতিদিন একটা সেলফি তুলতেই হবে,বিয়ের পর জামাইয়ের সাথে প্রতিদিন ৫ টা ছবি তুলে ফেসবুকে দিতেই হবে।

ফেসবুক সেলিব্রিটির পেজে গিয়ে একটা কমেন্ট করতেই হবে-

এখন প্রতিটি ইউনিভার্সিটিতে দেখা যায় বছরে ৪/৫ টা ব্যান্ড আসে।গান হয় নাচ হয়,আর সাথে ছেলে মেয়েরা সুর মিলিয়ে নাচে।

তাদের কাছে জীবনটা এইটুকুতে সীমাবদ্ধ। 

কিন্তু জীবনের প্রকৃত অধ্যায় তারা কখনো খোজার চেষ্টা করছেনা-

জীবনে যেদিন বুঝতে পারবেন হায় আমি কি করলাম আমাদের ৪০/৫০ বছরের জীবনে।আমাকে কে মনে রাখবে।আমাকে আমার কোন কর্মের জন্য মনে রাখবে।

আমি এই দেশ এই পৃথিবীকে কি দিয়ে গেলাম?

সব কিছুর উত্তর হিসেবে যখন শুধুমাত্র একটা হতাশা পাবেন তখন বুঝবেন আপনি জীবনকে ব্যবহার করেছেন নিজের স্বার্থে শুধু।কারো একটা ভেঙে পরা জীবন,হারতে বসা কারো কাধে হাত রেখে সাহস দেওয়া-

পারবনা বলা মানুষটির কাছে গিয়ে তোমাকে পারতে হবে বলা আর হতাশায় ডুবে থাকা মানুষটির কাছে গিয়ে বলা আমিতো আছি - এইতো জীবন।

আমাদের উপহার দেওয়া এই জীবনটাকে একটু ভালোভাবে, ভালোকাজে ব্যবহার করুন।

ভালোবাসুন সকল অসহায়কে,প্রতিবাদ করুন সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে। 

জীবনটাকে জীবনের মতো করে বাঁচতে দিন।💙



বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২১

বাবা মেয়ের যে গল্প কাঁদিয়েছিল সারা পৃথিবীর মানুষকে..

 👤 বাবা!! নামটা দুই অক্ষরের, ছেলে অথবা মেয়ে, দুই অক্ষরের!! পাগল এবং সন্তান তিন অক্ষরের।

কি লিখছি নিজেও জানি না, কেনও মুভিটা দেখলাম, বাবা নামক এক পাগল, আর কোরিয়ান ভাষায় বাবা(appa) বাবা(appa) বলে ডাকে এমন এক নিষ্পাপ মেয়ের 👧 ভালোবাসা অনুভব করতে ইচ্ছে করলো। এর আগের দিনের #Grave_of_the_Fireflies নিয়ে লেখার পরে খুব ইচ্ছা করছিলো #Miracle_in_Cell_no_7 মুভিটা নিয়ে কিছু অনুভূতি শেয়ার করার। আর তাই ভাবলাম লেখার আগে আরেকবার দেখে ফেলি; গরম-গরম না দেখে ঠিক কথা গুলো আসে না। শেষমেষ এই দুঃসাহসিকতার কাজটা করেই ফেল্লাম।

🎬🎬কিছু কিছু মুভি থাকে যেখানে রিভিউ দেওয়ার কিছু থাকে না, শুধু বলার থাকে, "দেখবেন হাসবেন, কাঁদবেন আর সম্পর্কের টান বুজতে পারবেন"। এই Miracle in cell no 7 একদম তেমন একটা ছবি, যার গল্পটা দেখে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।
মুভির নামঃ ( Miracle in cell no.7)
মুক্তির সালঃ( 2013)
IMDB: 8.2/10
আপনি যত শক্ত মনের মানুষই হন না কেন মুভিটি আপনার চোখে পানি আনবে সেই নিশ্চয়তা দিতে পারি
স্পয়লার এলার্টসঃ একটি বাবা যে তার মেয়েকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারেনা,
তাকে একটি মিথ্যা হত্যা মামলায় ফাসানো হয় লোকটি মানসিকভাবে অসুস্থ এবং সরল হবার কারনে খুব সহজেই তাকে জেলে পাঠানো হয়
বাচ্চা মেয়েটি কিংবা তার বাবা কেউই কাউকে ছাড়া অভ্যস্ত না থাকায় জেলের কিছু কয়েদিরা মিলে মেয়েটিকে তার বাবার কাছে এনে লুকিয়ে রাখে এবং জেলের মধ্যেও বাবা এবং মেয়ের একসাথে থাকা হয়,
যদিও পুলিশ তাদের আবার আলাদা করে দেয়
মানসিকভাবে অসুস্থ লোকটিকে বলা হয় তার মেয়েটিকে বাচাতে হলে অবশ্যই তাকে কোর্টে স্বীকার করতে হবে যে সে খুন করেছে না হলে তার মেয়েকে খুন করা হবে
মেয়েটির বাবা মেয়েটিকে বলে ইয়েংসিং তোমার বাবা খুব দ্রুতই বের হয়ে আসবে মেয়েটিও বাবার কথায় বিশ্বাস রাখে
পরবর্তীতে তার মেয়ের জন্য সে দোষ না থাকা সত্ত্বেও দোষ শিকার করে নেয়
এবং তার ফাসি কার্যকর হয়
মুভিটিতে অনেক ড্রামাটিক সিন রয়েছে যা মুভিটিকে আরো গুছিয়ে উপস্থাপন করেছে
মুভিটা একটি সত্য ঘটনে অবলম্বনে তৈরী,
দেখে নিতে পারেন ভালো লাগবে।

লিংকঃhttps://youtu.be/sG9Bw9Vv7xc
মুভি লিংকঃhttps://youtu.be/V1t2B3qGDe4


🤗"এ যেনও জেলখানার কেনও কারাগার না, এযেনও এক অন্য জীবনমঞ্চ!!" 🤗

📕📕এই ফিল্মের গল্পটা জেলে থাকা খুনের আসামি আর তার ৭বছরের এক মেয়ের গল্প। কোরিয়ান মুভিগুলো কেমন যেনও মনে হয় ডিসপ্লের ভিতর ঢুকে যায়। আমার একটা সেকেন্ডের জন্য মনে হয়নি হাতে ফোনটা নিয়ে দেখি, অথবা অন্য কিছু চিন্তা করি। এই করোনার দুশ্চিন্তায় এমনিতেই খারাপ 😣🥺 অবস্থা।

👨‍👩‍👦 অভিনয় গল্প ডায়ালগ এই তিনটি ছিলো আসল অস্ত্র!! AKM/SCAR-L মনে হয়েছে গল্প, M24 গেলেছে অভিনয় এবং AWM মনে হয়েছে বাবা আর মেয়ের ডায়লগগুলো!!
যখন Yeseung এক জেলারকে বলে,"Can't you just arrest me, too?" তখন মনে হচ্ছিলো AWM দিয়ে কেউ আমাকে Pochinki তে শেষ করে দিয়েছে।
আর যতবার appa apaa শুনেছি ততোবারই মনে হচ্ছিল Flaregun দিয়ে বোনাস দিচ্ছে।
M24 অভিনয় বলার কারণ Yeseung তো মাএ ৭বছরের মেয়ে (এই মুভির জন্য গ্রন্ড বেল পুরষ্কার পায়) হয়ে যে অভিনয় দেখিয়েছে, তাছাড়াও সাথে বাকি সবগুলো চরিএ Miracle in cell no 7 কে একটা পরিপূর্ণ মুভি বানিয়েছে।

🚩🚩আপনি যে বয়সেরই হয়ে থাকেন না কেনও, আপনার সাথে পরিবার থাকুক আর একলাই থাকেন এই Miracle in cell no 7 অবশ্যই দেখার( Must watch) মতন একটা মুভি।


সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১

বাংলাদেশের প্রথম ঘোষিত বীরশ্রেষ্ঠ জগৎজ্যাতি দাস। 🙏

 বাংলাদেশের প্রথম ঘোষিত বীরশ্রেষ্ঠ জগৎজ্যাতি দাস।  🙏

.


তিনি বীরের মত যুদ্ধ করতে করতে বীরগতি পেয়েছেন। তিনি ছিলেন শত্রুদের কাছে জীবন্ত এক ভয় আর বিস্ময়। তিনি দুর্ভাগা, তিনি স্বীকৃত নন এই খেতাবে, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নন। নিজের জীবন তিনি বিলিয়ে দিয়েছেন, মৃত্যুর পরেও তাঁর শব ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে শত্রুদের আঘাতে- প্রকাশ্যে, তিনি যে দেশকে ভালবেসেছিলেন।

.

যে বীরের কথা বলতে এসেছি, তিনি বাংলার ঘোষিত-অস্বীকৃত প্রথম বীরশ্রেষ্ঠ জগৎজ্যোতি! হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে বিংশ শতাব্দীর এই অভিমন্যু জন্ম গ্রহণ করেন যিনি বাংলার কুরুক্ষেত্রের চক্রব্যূহে প্রাণ দিয়েছেন বাংলার তরে। জলসুখা গ্রামের জিতেন্দ্র চন্দ্র দাস ও হরিমতি দাসের কনিষ্ঠ পুত্র জগৎজ্যোতি দাস।

.

 ১৯৭১ সালে ছিলেন এইচএসসি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিশেষ দায়িত্ব পালনে ভারতের গৌহাটির নওপং কলেজে ভর্তি হন; বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষা আয়ত্তের পাশাপাশি ধারণা নিয়ে আসেন অস্ত্র ও বিস্ফোরকের উপর। ভাটি-বাংলার মাটিকে মুক্ত করার শপথ নিয়ে তিনি হন দাস পার্টির কমান্ডার। প্রতিজ্ঞা করেন দেশ মাতৃকার মুক্তির। 

.

পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের কাছে জগৎজ্যোতি ছিলেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক। বিশাল ভাটি-বাংলায় শত্রুসেনাকে পদদলিত করতে দাবড়ে বেড়িয়েছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের অধীনে বিস্তীর্ণ ভাটি অঞ্চল শত্রু মুক্ত রাখার দায়িত্ব পড়েছিল তাঁর উপর। দিরাই, শাল্লা, ছাতক, আজমিরিগঞ্জ, বানিয়াচং, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার নৌপথ পাক দখলমুক্ত রাখার যুদ্ধে প্রাণের বাজি রেখে লড়ে যান দাস পার্টির যোদ্ধারা।

.

 দাস পার্টির সাফল্যে ভীত ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী, আর তাই পাকিস্তান সরকার রেডিওতে ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়, এই রুট দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের জানমালের দায়িত্ব সরকার নেবে না। মাত্র ১৩ জন সহযোদ্ধা নিয়ে বানিয়াচং-এ পাকবাহিনীর ২৫০ জন সেনা ও দোসরদের অগ্রগতি রোধ করে দেন, যুদ্ধে প্রাণ হারায় শত্রু সেনার ৩৫ জন। 

.

পাকিস্তানীদের গানবোট ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার জামালগঞ্জ থানা ও নৌ-বন্দর সাচনাবাজার শত্রু“মুক্ত করে লাইম লাইটে চলে আসেন তিনি।তাঁর নেতৃত্বে সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কের বদলপুর ব্রিজ বিধ্বস্ত করা হয় আর তাঁরই কৃতিত্বের কারণে ভারতীয় কমান্ড বাহিনীর মেজর জি,এস,ভাট প্রশংসা লাভ করেন। ১৭ আগস্ট পাহাড় পুরে কমান্ডার জগৎজ্যোতির রণকৌশল আর বীরত্বে রক্ষা পায় অসংখ্য নিরীহ নর-নারী। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে তাঁর বীরত্ব-গাঁথা প্রচার হয়। জগৎজ্যোতি একা হাতে একটি এলএমজি নিয়ে দখন করে নেন জামালপুর থানা যেখানে আস্তানা গেড়েছিল স্থানীয় পাকি-দোসর রাজাকাররা। 

.

জামালপুর মুক্ত করার অভিযানে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হন তাঁরা, হারাতে হয় তাঁর সহযোদ্ধা বীর সিরাজুল ইসলামকে। মাত্র ১০-১২ জন সহযোদ্ধা নিয়ে তিনি মুক্ত করেন শ্রীপুর। খালিয়াজুড়ি থানায় ধ্বংস করে দেন শত্রুদের বার্জ।

.

 আগস্ট মাসে গুলি ব্যয় ছাড়াই দিরাই-শালায় অভিযান চালিয়ে কৌশলে আটক করেন দশ সদস্যের রাজাকারের দলকে। যারা এলাকায় নির্যাতন চালাচ্ছিল, খুন, ধর্ষণ ও লুটপাট চালাচ্ছিল। রানীগঞ্জ ও কাদিরীগঞ্জে অভিযান চালিয়েও জ্যোতি আটক করেন ঘরের শত্রু রাজাকারদের। ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার জামালগঞ্জ থানা ও নৌ-বন্দর সাচনাবাজার শত্রুমুক্ত করে লাইম লাইটে চলে আসেন। 

.

১৬ নভেম্বর ১৯৭১; এই দিন ছিল বীরের ললাটে লেখা শেষ দিন। ভোরের সূর্য ওঠার সাথে সাথেই ৪২ জন সহযোদ্ধা নিয়ে অভিযানে যাত্রা করেন জগৎজ্যোতি। কে জানত- এই অভিযান তাঁর শেষ অভিযান, বীরত্বের অন্তিম-গাঁথা এখানেই রচিত হবে। তাঁদের লক্ষ্যস্থল ছিল বানিয়াচং/বাহুবল। কিন্তু লক্ষ্যস্থলে যাওয়ার পূর্বেই বদলপুর নামক স্থানে হানাদারদের কূট-কৌশলের ফাঁদে পা দেন জগৎজ্যোতি। বদলপুরে ৩/৪ জন রাজাকার ব্যবসায়ীদের নৌকা আটক করে চাঁদা আদায় করছিল।

.

দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ জ্যোতি রাজাকারদের ধরে আনার নির্দেশ দেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের দেখেই পিছু হঠতে থাকে কৌশলী রাজাকাররা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন জগৎজ্যোতি- ভাবতেও পারেননি কী ফাঁদ তাঁর সামনে। সাথের ১০/১২ জন মুক্তিযোদ্ধা আর সামান্য গোলাবারুদ নিয়ে তাড়া করেন রাজাকারদের। অদূরেই কুচক্রী পাকসেনাদের বিশাল বহর আর প্রচুর সংখ্যক গোলাবারুদ নিয়ে অপেক্ষা করছিল তাঁর। অজান্তেই চক্রব্যূহে প্রবেশ করেন জগৎজ্যোতি। আগে থেকে প্রস্তুত বিশাল বহর আর মজুদের কাছে বিপদে পড়ে যান জগৎজ্যোতি ও তাঁর সহযোদ্ধারা। তবুও যুদ্ধে করে যান মুক্তিযোদ্ধারা।

.

সঙ্গীদের জীবন বাঁচাতে স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেন জগৎজ্যোতি। 

সহযোদ্ধাদের পালানোর সুযোগ করে দিয়ে কভার করতে থাকেন জগৎজ্যোতি ও তাঁর সহযোদ্ধা ইলিয়াস। কিন্তু দুর্ভাগ্য, হঠাৎ করে ইলিয়াসও গুলিবিদ্ধ হন। নিজের মাথার গামছা খুলে জগৎজ্যোতি বেঁধে দেন সহ-বীরযোদ্ধার ক্ষত।

.

 ইলিয়াস তাঁকে পালানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু পিছু ফিরে যাননি জগৎজ্যোতি। একাই যুদ্ধ করতে করতে পাক-বাহিনীর বারোজনকে প্রপারে পাঠিয়ে দেন। বিকেল পৌনে পাঁচটায়, শূন্য অস্ত্রভাণ্ডারে বিকেলের সূর্যের মতই ম্লান হয়ে আসে শত্রু-বধের তেজ, গুলিবিদ্ধ হন জগৎজ্যোতি। নিভে যায় এক বীরের জীবন-প্রদীপ।

.

শুনা যায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেও তিনি জীবিত ছিলেন। তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় অত্যাচার করতে করতে।তাঁর গায়ে পেরেক বিদ্ধ করে সেই ছবি খবরে ছাপানো হয়। আজমিরিগঞ্জ বাজারে নিয়ে আসা হয় তাঁর লাশ। 

.

সেদিন ছিল ঈদের বাজার। শত শত লোকের সামনে খুঁটির সাথে বেঁধে ক্ষত-বিক্ষত করা হয় তাঁর লাশকে। রাজাকাররা থু থু ফেলতে থাকে তাঁর উপর। এমনকি জগৎজ্যোতির মা-বাবাকেও ধরে আনা হয় বীভৎস লাশ দেখাতে। পরিবারে যখন স্বজন হারানোর কান্নার রোল তখন আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় জগৎজ্যোতির বাড়িতে। ভাসিয়ে দেওয়া হয় তাঁর ক্ষত-বিক্ষত কুশিয়ারা নদীর পানিতে।

.

  জগৎজ্যোতি দাসকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল একাধিকবার এবং তাঁর বীরত্ব-গাঁথা প্রচার হচ্ছিল সম্মানের সঙ্গে। অল ইন্ডিয়া রেডিওসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয় জগৎজ্যোতির বীরত্ব-গাঁথা। 

.

অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ মরণোত্তর পদক প্রদানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে জগৎজ্যোতিকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক প্রদানের ঘোষণা সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পরে প্রতিশ্রুতি থেকে ফিরে আসেন  সরকার। ১৯৭২ সালে জগৎজ্যোতি দাসকে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। বাস্তবে পুরস্কার প্রদান করা হয় তারও দুই যুগ পরে।

.

 একটি দেশের জন্য জগৎজ্যোতি বিলিয়েছেন নিজেকে।  দেশ তাঁকে তাঁর প্রাপ্য স্বীকৃতি দেয়নি! তাঁরা তো কখনো কোনো প্রাপ্তির অপেক্ষায় ছিলেন না! একটি মাতৃভূমির জন্য জগৎজ্যোতি বিলিয়েছেন নিজের প্রাণ। 

জগৎজ্যাতি প্রতিটি মুহূর্তে থাকেন এই বাংলার নিঃশ্বাসে, স্পন্দনে।

.

আজ কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যাতি দাসের জন্মদিন। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই তাঁর প্রতি। 🙏💞

.

ছবি- ১৭ নভেম্বর  আজমীরিগঞ্জ বাজারে জগৎজ্যোতি দাসের লাশ পড়ে আছে।

রবিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২১

ক্ষমার চেয়ে কঠিন প্রতিশোধ আর নেই"

 "ক্ষমার চেয়ে কঠিন প্রতিশোধ আর নেই"



'প্রিয়াঙ্কা গান্ধী'১৮ই অক্টোবর ২০০৮ সালে নলিনী'র সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। নলিনী হলো রাজীব গান্ধী হত্যা ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে একমাত্র ধৃত এবং জীবিত আসামী। 


নলিনী তখন গর্ভবতী। সোনিয়া গান্ধী লিখিতভাবে নলিনী'র ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আবেদন জানান। যাতে নলিনী'র সন্তান মায়ের স্নেহ মমতা থেকে বঞ্চিত হয়ে না পড়ে। 


নলিনী স্বপ্নেও ভাবেননি তার সঙ্গে রাজীব গান্ধীর পরিবারের কেউ সাক্ষাত করতে পারেন। তার খোঁজ-খবর নিতে পারেন। 


প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে দেখে নলিনী অবাক,ভীষণ লজ্জিত বোধ করলেন। 


প্রিয়াঙ্কা নলিনীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন -

"আমার পিতা একজন ভালো মানুষ ছিলেন। ভীষণ শান্ত প্রকৃতির মানুষ। 

আমার পিতা তোমার তো কোনো রকম ক্ষতি করেননি। তাহলে তাঁকে কেন হত্যা করতে গেলে|

তোমাদের কি এমন সমস্যা ছিলো,যেটা আলাপ-

আলোচনার মাধ্যমে 

সমাধান করা যেত না!


প্রিয়াঙ্কার চোখে অশ্রুধারা, নলিনী ও অঝোর নয়নে কেঁদে চলেছে। 

এই কান্নার দ্বারা বহু ক্ষোভ, বহু হিংসা স্রোতের মতো প্রবাহিত হয়ে গেল। 

দুজনের মন হালকা ও কোমল হয়ে উঠলো। 


গান্ধী পরিবার সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন,নলিনীকে মুক্ত করে দিলেও তাদের কোনো আপত্তি নেই। বিষয়টা আদালতে বিচারাধীন। আদালত এবং রাজ্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই কার্যকর হবে। 


ক্ষমা হলো পৃথিবীর সর্বোত্তম উপহার। কেবলমাত্র মহান মানুষই পারেন-শক্রুকে ক্ষমা করে দিতে। 


এমন বহু ঘটনা ঘটে গেছে পৃথিবীতে,যে ঘটনা ইতিহাসের পাতায় সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে কেবলমাত্র ক্ষমাশীলতার উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে। 

"জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক-দুঃখ হতে মুক্তি লাভ করুক।" (সংগৃহীত)

একে কি বলে একাকিত্ব নাকি স্বাধীনতা!?

 যখন সকালে ঘুম ভাংগানোর কেউ নেই, রাতে বাড়ি ফিরলে অপেক্ষায় কেউ বসে নেই, তুমি যা মন চায় করতে পারো, কোনো পিছুটান নেই.... একে কি বলে একাকীত্ব না...