তাসনিমের মেডিকেলে চান্স পাওয়ার গল্প।
ছোটবেলা থেকেই তাসনিমের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার, সাদা এপ্রোন গায়ে জড়ানোর। মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে এবং সকলের দোয়ায় আজ সেই স্বপ্ন তার পূরণ হয়েছে।
তাসনিমের বাড়ি শ্রীমঙ্গলের সিরাজনগর গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখা করতে ভালোবাসতো সে। কাকিয়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন এ+ ও বৃত্তি পেয়ে পিএসসি পাশ করে। স্কুলের ইতিহাসে সেই প্রথম এ+ পাই। প্রতি ক্লাসে প্রথম হতো। আদরের মেয়েকে আম্মু আব্বু এবার শহরে পাঠালেন। শ্রীমঙ্গল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি উভয় পরীক্ষায় গোল্ডেন এ+ ও বৃত্তি পায়। স্কুলের সব প্রতিযোগিতা, অনুষ্ঠান, গার্লস গাইড সবকিছুতেই ছিল তার অবাধ বিচরণ। স্কুলের সবাই একনামে চিনতো। স্যার ম্যামদের প্রিয় তাসনিম ইবনাত, জুনিয়রদের আদরের জামি আপু। তারপর ভর্তি হলো শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজে। স্কুল কলেজের সবচেয়ে দূরের ছাত্রী ছিল। আধঘন্টা মাটির রাস্তায় হেঁটে আরও আধঘন্টা গাড়িতে চড়ে শ্রীমঙ্গলে আসতে হতো তাকে প্রতিদিন। তার ভাষ্যমতে স্যার ম্যাম আর বান্ধবীদের আদর ভালোবাসায় কোনো কষ্টই মনে হতো না তার। তাসনিমের প্লাস পয়েন্ট ছিল শ্রীমঙ্গলে নানুবাসা থাকা। সেখানে দুপুরে বিশ্রাম নিতে পারায় তার কষ্ট একটু কম হতো।
তাসনিমের প্রিয় বিষয় ছিল গণিত। স্যাররা বোর্ডে একদিকে প্রশ্ন লিখতেন আর অন্যদিকে তার অংক করা শেষ হয়ে যেত। একদিন তো তার এক বান্ধবী স্যারকে জিজ্ঞাসা করে ফেলসিল স্যার তাসনিম এতো তাড়াতাড়ি লিখে ফেলে কিভাবে। স্কুল কলেজে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, লয়ার, প্রোগ্রামার, ম্যাথমেটিশিয়ান আরও কতো কিছুই হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। তবে সাদা এপ্রোনের মায়া উপেক্ষা করতে পারেনি সে। অত্র কলেজ থেকে অনেক কম শিক্ষার্থী মেডিকেল চান্স পায়, বছরে ২/৩ জন। ঢাকার কোনো মেডিকেলে কেউ আছেন বলেও জানা নেই। তাই চান্স পাবে কিনা, এই ভয়টা কলেজের সবার মতো তারও হতো না, এমন না। কলেজ লাইফটা ছিল তার কাছে স্বপ্নের মতো। কলেজের প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া, বিভিন্ন অলিম্পিয়াড, কম্পিটিশনে প্রথম হওয়া, বিশেষ করে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপুমনি এমপি, মহোদয়ের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করাসহ সবকিছু মিলিয়ে লাইফটা অনেক সুন্দর ছিল তার। গ্রুপ লিডার ছিল কলেজ রেড ক্রিসেন্টে দলেরও। কলেজের সবাই একনামে চিনতো, তাসনিম ইবনাত। প্রিন্সিপাল স্যার থেকে শুরু করে সব স্যার ম্যামরা এবং তার বান্ধবীরা অনেক অনেক বেশি আদর করতেন তাকে। সবসময় মোটিভেট করতেন। তাসনিম কোনোদিন মন খারাপ করে থাকলে স্যার, ম্যামরা জিজ্ঞাসা করতেন, "কি হয়েছে তাসনিম মন খারাপ কেনো? তুমি কি অসুস্থ?" এই জিনিসগুলো যে কতো বড় পাওয়া!
আম্মু আব্বুর একমাত্র আদরের মেয়ে তাসনিম। কখনো পড়ালেখা করতে চাপ দেননি। ইন ফ্যাক্ট তার আম্মু আব্বু বলতেন এতো পড়তে হবে না। মেডিকেলে না হলে আরও অনেক ভার্সিটি আছে। কোনো চাপ নেয়ার দরকার নেই। রেজাল্টের আগের দিন রাতেও বুঝিয়ে বলেছেন অন্য কোথাও পড়াবেন সমস্যা নাই। সবসময় সাপোর্ট করতেন তাকে। যা চাইতো উনাদের কাছে তার চেয়েও বেশি দিতেন।
তাসনিম বলেছে, "আমি মনে করি কলেজ লাইফেই এডমিশনের রুট গড়ে নেওয়া উচিত। আর এতে আমার সম্মানিত স্যারগণ, আম্মু আব্বু আমাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করেছেন। উনাদের দোয়ায়ই আমি মেডিকেলে চান্স পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
সবাই তাসনিমের জন্য দোয়া করবেন সে যেন একজন ভালো ডাক্তার হয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে সবার সেবা করতে পারে।"
Tasnim Ebnath.
Sir Salimullah Medical College, Dhaka. (SS-49)
Ex-Sreemangal Govt College (HSC-2020)