ডাক্তারী - একটি পেশার গল্প (বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট) :
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
°
ব্রিটিশ ভারতীয় যুগে এই উপমহাদেশের চিকিৎসা কার্যক্রম সঠিক এবং বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে শুরু হয়। অনেক লোক মারা যেত তখন, কারন প্রাচীন ভেষজ পদ্ধতিতে অল্প কিছু ওষুধ আর সর্বোচ্চ শল্যবিদরা শল্য (কাঠি) এর মাধ্যমে চিকিৎসা কার্যক্রম শেষ করতেন। মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর মাত্র। তারপর মানুষ দেখল বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসার সুফল। তারা দেখল জটিল অস্ত্রোপচার এবং উপযুক্ত ওষুধ পেলে মৃত্যুর মুখ থেকে রোগী ফিরে আসে। তখন ইংরেজ চিকিৎসকরা ছিলেন। পদের নাম ছিল সিভিল সার্জন। সহজে তাদের নাগাল পাওয়া যেত না। তারা মৃত্যুকে ফেরত পাঠাতে পারেন তাই তারা হলেন, ফেরেশতা, ভগবান, ইত্যাদি। গড় আয়ু বাড়তে বাড়তে হল ৫৮ যখন দেশ পূর্ব-পাকিস্তান। তখনও দেশে ডাক্তার অনেক কম। কিন্তু, দেশে ডাক্তার হওয়ার বেশ কয়েকটি কলেজ আছে। সবার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু, সিট সীমিত। জনসংখ্যা ১ কোটি থেকে ৭ কোটি হয়েছে। সরাসরি সরকারি চাকুরির সুবিধা দেয়া হল ডাক্তারদের, কিন্তু বাড়তি জনসংখ্যার অনুপাতে ডাক্তার বাড়ল না, তাদের চাপ বাড়তে থাকল। এদিকে, দরিদ্র দেশ, রোজগার নিয়ে সবাই ব্যস্ত। ডাক্তার হওয়ার চাহিদাও বেড়ে গেল ব্যাপক ভাবে। দেশ এখন বাংলাদেশ, মানুষ ২০ কোটি, কিন্তু সরকারি চাকুরির জন্য ডাক্তারকে এখন বিসিএস দিতে হয়, যেখানে ৬৫ সনে ৭ কোটি মানুষের চাহিদা মেটাতে বিসিএস দেয়া লাগত না জনসংখ্যার অনুপাতে ডাক্তার কম বলে, সেখানে এখন দেয়া লাগছে, তাতে অপর্যাপ্ত চিকিৎসকের জন্য সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার মান কমে যাচ্ছে, লোকজনের কাছে চিকিৎসকরা ফেরেশতা থেকে হয়ে ওঠলেন কসাই, যদিও অকল্পনীয় পরিশ্রমের ফসল হিসেবে গড় আয়ু হয়েছে ৭৪ বছর৷ এখন দেশ দরিদ্র নয়, কিন্তু তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের মধ্যে লোভ বেড়েছে ব্যাপক হারে। অন্যদিকে জনসংখ্যা বেশী তাই এই পেশার চাহিদা বেশি থাকায় লোভ আরও বাড়ল, যারা লোভী তারা মেধাযুদ্ধে পরাজিত হয়ে শুরু করল ঘোরতর হিংসা৷ শুরু হল পেশার উপর বিভিন্ন দুর্বৃত্ত শ্রেনীর আক্রমণ, মহৎ পেশা হয়ে উঠল ব্যবসা। মানুষ হল ভুক্তভোগী, তৈরী হল ক্রোধ। মধু যদি বেশি ঘন হয়, পিপড়ার আক্রমনও বেশী হয়। এক সময় তা ফুরিয়ে যায়।
এদিকে ব্রিটিশদের পদ্ধতি তারা পরিবর্তন করে NHS নিয়ে এসেছে, অথচ আমরা সেই আমাদের ব্রিটিশ যুগেই পড়ে আছি না বরং পিছিয়ে গেছি বিসিএস এ আবদ্ধ করে।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সবাই সহানুভূতিশীল হোন।
দেশের অচলায়তন থেকে মুক্তির জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক অনতিবিলম্বে আগের নিয়মেই নিয়োগ দিয়ে, লকডাউন শিথিল করে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করা অতি জরুরী। একটি মহামারী সহজে দূর হয় না, যক্ষার প্রাকৃতিক ইতিহাস বলে যে তা এখনো নির্মূল হয় নি৷ এই মহামারী নিয়েই চলতে হবে। সকল জটিলতা দূর করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বিসিএস এর বেড়ি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে "জাতীয় চিকিৎসা সার্ভিস" (NHS) চালু করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।