বৃহস্পতিবার, ৬ মে, ২০২১

প্রবাসীদের রেমিটেন্স কোথায় খরচ হয়?

 প্রবাসীদের রেমিটেন্স কোথায় খরচ হয়?



বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকে প্রতিটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাউন্টে। সাধারণত আমদানি রপ্তানির জন্য মুদ্রার বিনিময় হয়ে থাকে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মুদ্রা। তাই সকল দেশ একটি স্বতন্ত্র মুদ্রা ব্যবহার করে আমদানি রপ্তানির দায় মেটানোর জন্য। এজন্য সবাই মার্কিন ডলার ব্যবহার করে। 


মূল কথা হচ্ছে কীভাবে বিদেশে থাকা প্রবাসীদের টাকা তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছায়। প্রথমে বিদেশে থাকা প্রবাসীরা সেই দেশের মুদ্রায় তাদের বেতন পায়। যেমন সৌদি আরব থাকলে রিয়াল পায়। সেই রিয়াল তারা সেই দেশের ব্যাংকে জমা দেয়। সেই ব্যাংক রিয়ালকে ডলারে রুপান্তরিত করে প্রবাসীদের দেশের নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসেবে পাঠায়।


 সুতরাং আমাদের দেশের ব্যাংকে জমা হয় মার্কিন ডলার। কিন্তু প্রবাসীদের পরিবারের দরকার হচ্ছে টাকা। কারণ দেশে টাকা চলে ডলার নয়। তখন দেশীয় ব্যাংক সেই ডলার নিয়ে যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের শুধু ক্ষমতা আছে ডলার ক্রয় করে টাকা দেওয়ার।


 ধরা যাক সোনালী ব্যাংকের কাছে প্রবাসীদের ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। সোনালী ব্যাংক সেই এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা দিয়ে ডলার অনুপাতে ৮৫০০ কোটি টাকা এনে সেগুলো প্রবাসীদের পরিবারের কাছে পরিশোধ করবে। 


ঠিক তখনই বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্টে রিজার্ভ এর পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার বাড়বে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক যে ডলার রেখে টাকা দিচ্ছে তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা কোথায় পায়?? বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপায়। এই ক্ষমতা শুধু তারই আছে। সেই ছাপানো টাকা দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ডলার ক্রয় করে।


সবসময় কি টাকা ছাপিয়ে ডলার কিনে??


না। বছরে সর্বোচ্চ ২০/৩০(আনুমানিক) হাজার কোটি টাকা ছাপায়। কারণ অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির ফলে বাজারে তরল টাকার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তাই ততটুকু পরিমাণে টাকা ছাপায়। এর বেশি টাকা ছাপানো হলে টাকার মান কমে যাবে। তবে  বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনে ৩০/৪০ বিলিয়ন ডলারের প্রতি বছর।


 তাহলে এত টাকা কোথায় পায়?? 


আসলে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু ডলার ক্রয় করেনা। বিক্রিও করে। যখন আমরা বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করি তখন কিন্তু বিদেশে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। তখন যিনি টাকা পরিশোধ করবেন তিনি বানিজ্যিক ব্যাংক এ গিয়ে টাকা জমা দেন। বানিজ্যিক ব্যাংক সেই টাকা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এর কাছে জমা দিয়ে ডলার নেয়। এবং সেই ডলার পণ্য বিক্রেতার একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়। অথবা এভাবে বলা যায় বানিজ্যিক ব্যাংক সেই টাকাকে ডলারে রুপান্তরিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট জমা দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি পণ্য বিক্রেতার একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে অতিরিক্ত ডলার গুলো আমদানির দায় পরিশোধে ব্যবহৃত হয়।


বাংলাদেশের রিজার্ভ এত বৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়। আজকে রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। কারণ একই সাথে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিদেশ থেকে প্রচুর রেমিটেন্স এসেছে। সেই তুলনায় আমরা পণ্য আমদানি করিনি। আমাদের রপ্তানির চেয়ে কিন্তু আমদানি অনেক বেশি। সেই হিসেবে আমাদের ডলার ঘাটতি থাকার কথা। কিন্তু প্রবাসীদের রেমিটেন্স আসার ফলে সেগুলো ব্যবহার করে আমদানি দায় মেটানো হয়। 


খুব সংক্ষেপে উদাহরণ হিসেবে আমাদের রপ্তানি ৩৫ ডলার কিন্তু আমদানি ৬০ ডলার। তাহলে ঘাটতি ২৫ ডলার। এই ২৫ ডলারের মধ্যে ২০ ডলার রেমিটেন্স আসতেছে। তবুও ঘাটতি ৫ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি বছর ৩ ডলার ছাপে(সমপরিমাণ টাকা)। তবুও ঘাটতি ২ ডলার। প্রতি বছর বিদেশি বিনিয়োগ আসতেছে ৬ ডলার। এখন ঘাটতি কাটিয়ে উদ্বৃত্ব ৪ ডলার। এই ৪ ডলার করেই রিজার্ভ প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। 


অবশেষে একটি কথা। 

প্রবাসীদের রেমিটেন্স দেশের জন্য ভিক্ষা নয়। অনেকে এমনটাই মনে করতেছেন। অনেকে মনে করতেছেন এই টাকা বিভিন্ন সরকার দল চুরি করে। সেটাও ভিত্তিহীন। আপনার টাকা আপনার পরিবার পায়। আপনার রেমিটেন্স দিয়ে দেশের উপকার হচ্ছে। সেটা হলো ডলার আসায় সরকারের আমদানি দায় মেটানো সহজ হচ্ছে। নয়তো ডলারের ঘাটতি থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশি বেশি টাকা ছেপে সব ডলার ধরে রাখতো। ফলে জিম্বাবুয়ের মতো মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতো।


©

কোন মন্তব্য নেই:

একে কি বলে একাকিত্ব নাকি স্বাধীনতা!?

 যখন সকালে ঘুম ভাংগানোর কেউ নেই, রাতে বাড়ি ফিরলে অপেক্ষায় কেউ বসে নেই, তুমি যা মন চায় করতে পারো, কোনো পিছুটান নেই.... একে কি বলে একাকীত্ব না...